মঙ্গলবার, ০৮ Jul ২০২৫, ০১:৪৫ পূর্বাহ্ন
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ৩টায় নারায়ণগঞ্জের বন্দরের নবীগঞ্জ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তার সঙ্গে থাকে থাকা অন্তত তিন জন আহত হন।
আহতরা হলেন- নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির সভাপতি মাসুদ রানা, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মুন্না, শ্রমিক দল নেতা কাউছার।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার বন্দর থানার তিনগাও এলাকায় একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় টিপু হামলার শিকার হন। পরে তাকে আহত অবস্থায় শহরের খানপুর তিনশো শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে শহরের আরেকটি প্রাইভেট হাসপাতালে নেওয়া হয় বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য।
এদিকে হাসপাতালে গিয়ে আহত টিপুর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ‘আমি বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বন্দরের তিনগাও এলাকায় একটি অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার পথে নবীগঞ্জ এলাকায় পৌঁছালে আমার ওপর অতর্কীত হামলা করা হয়।’
এ সময় তার ওপর হামলার জন্য বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান মুকুল এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবুল কাউছার আশার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘তাদের অনুসারী সৌরভ, রাজীব, জাহাঙ্গীর, লিপুসহ আনুমানিক দেড় শতাধিক দুর্বৃত্ত হামলা চালায়। তারা আগে থেকেই ওৎ পেতে থেকে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এ সময় চাপাতি দিয়ে আমার ঘাড়ে কোপ দেওয়া হয়। রক্ষা করার জন্য আমার সহযোগীরা এগিয়ে আসলে তাদেরকেও মারধর করা হয়। পরে কোনরকমে আমাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে শহরে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে আনা হলে আমার ঘাড়ে সেলাই করা হয়।’
এদিকে বিএনপির মহানগরের এই নেতার ওপর হামলাকে বিএনপির অন্তরকোন্দলকেই দায়ী করছেন অন্যান্য নেতাকর্মীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা কর্মীর সাথে কথা বলে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে গার্মেন্টকর্মী মিনারুল হত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে প্রধান আসামী করে ১৩০ জনের নামে মামলা করা হয়। সেখানে ১১২ নম্বর আসমি করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান মুকুলকে। বিএনপির নেতা হয়েও মুকুলের নামে মামলা হওয়ার বিষয়টি বিএনপির অনেক নেতাকর্মীই ভালোভাবে নেয়নি।
বিএনপির নারায়ণগঞ্জের অনেক নেতাকর্মীর মতে ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলেও অসংখ্য মামলা দেওয়া হয়েছে। স্বৈরশাসকের পতনের পরেও যদি এখন বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়, সেটা দুঃখজনক। এসব ঘটনা নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে শুধু বিভক্তই করছে না, সাধারণ মানুষদের মনে আগামী নির্বাচনে বিরুপ প্রভাব পড়বে।
এদিকে টিপুর ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. সাখাওয়াত হেসেন খান বলেন, এটি একটি কাপুরষচিত হামলা। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যেভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজন হলো বিএনপি থেকে বহিস্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুল ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক বিএনপি দলীয় সাংসদ আবুল কালামের ছেলে আবুল কাউছার আশার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির লোকজন নিয়ে অতর্কীত হামলা চালায়। তাকে হত্যার উদ্দেশ্য চাপাতি দিয়ে আঘাত করা হয়। এতেই বোঝা যায় তাকে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যাবস্থা নিব।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক কাউছার জানান, নারায়ণগঞ্জ মহানগরের টিপু ও সাখাওয়াতরাতো আমাদের সবসময় স্বপ্নে দেখে। গত কয়েকদিন ধরেই আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গণহত্যার ঘটনায় পরিবাররা মামলা করছে। গত এক সপ্তাহ ধরে সেসব মামলায় ভয় দেখিয়ে নুরুজ্জামান নামের এক ব্যাবসায়ির কাছে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছে সাখাওয়াত ও টিপুর অনুসারী সুজন ও তার ভাই রাজু। শুক্রবারও বেশ কয়েকজনকে মারধর করা হয় চাঁদা না দেওয়ায়। এসব ঘটনা এলাকার মানুষ কতক্ষণ সহ্য করবে। যারা গত এক সপ্তাহ ধরে এসব নিপীড়ন সহ্য করছে তারাই এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাইলাউ মারমা বলেন, হামলার ঘটনার খবর পেয়েছি। তবে এখনো পর্যন্ত আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করে নাই। আমরা ঘটনা জানার চেষ্টা করছি। অভিযোগ পেলে আমরা আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহণ করব।